হৃদ্‌রোগের নানা উপসর্গ

 


হৃদ্‌যন্ত্রের যেকোনো রোগকেই হৃদ্‌রোগ বলা হয়। এই রোগ দীর্ঘদিন শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। গুরুতর হলে তবেই উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গ মৃদু কিংবা তীব্র হতে পারে। কখনো কোনো উপসর্গ ছাড়াই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়েও ধরা পড়ে রোগটি।

জন্মগত হৃদ্‌রোগ: জন্মগ্রহণের পর ত্রুটিপূর্ণ হৃদ্‌যন্ত্রের ত্রুটির ধরন এবং মাত্রার ওপর নির্ভর করে জন্মগত হৃদ্‌রোগের লক্ষণ। কিছু ক্ষেত্রে শিশুকালেই লক্ষণ দেখা দেয়। কিছু জন্মগত ত্রুটি বয়সের সঙ্গে এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। বেশি বয়সে সন্তান নেওয়া, গর্ভকালে মায়ের সংক্রমণ, ক্ষতিকর ওষুধ সেবন, বংশগত প্রভাব, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও মায়ের নানা রোগের কারণে সন্তানের হৃদ্‌রোগ হতে পারে। শিশুর অতিরিক্ত হাঁপিয়ে ওঠা, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গগুলো নজরে আনতে হবে।

হৃদ্‌যন্ত্রের ভালভের অসুখ: ভালভে জন্মগত ত্রুটি, বাতজ্বর-পরবর্তী ভালভের অসুখ এবং বয়সজনিত অসুখ হয়। হৃদ্‌যন্ত্রের কোন ভালভ আক্রান্ত হচ্ছে, তার ওপর উপসর্গ নির্ভর করে। অল্প পরিশ্রমে অধিক ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়, পরিশ্রমে বুকে ব্যথা, ঠোঁট-জিব নীলচে হওয়া এবং হঠাৎ পড়ে যাওয়া বা জ্ঞান হারানোর মতো উপসর্গ থাকে।

হৃদ্‌রোগ ও অ্যানজাইনা: হঠাৎ বুকে ব্যথা হৃদ্‌রোগের লক্ষণ। বুকে তীব্র ব্যথা, বুকে চাপ বা ভার অনুভূত হয়। ব্যথা ঘাড়, কাঁধ, চোয়াল, বাঁ হাত ও পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুকে ব্যথার সঙ্গে শরীর ঘামা, বমি অথবা বমিভাব থাকতে পারে। একই রকম ব্যথা যেকোনো শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে বাড়া এবং বিশ্রামে যদি কমে যায়, তবে তা অ্যানজাইনার লক্ষণ।

উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদ্‌রোগ: উচ্চ রক্তচাপ হলো নীরব ঘাতক। কারণ, উচ্চ রক্তচাপে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তেমন উপসর্গ থাকে না। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে কখনো রক্তচাপ মাপতে গিয়ে এটা ধরা পড়ে।

কার্ডিওমায়োপ্যাথি ও হার্ট ফেইলিওর: হৃদ্‌যন্ত্রের মাংসপেশির অসুখ হলো, কার্ডিওমায়োপ্যাথি। কার্ডিওমায়োপ্যাথি হলে হৃদ্‌যন্ত্র বড় হয়ে যায়। একসময় হার্ট ফেইলিওর হয়। শ্বাসকষ্ট হার্ট ফেইলিওরের প্রধান লক্ষণ।

গর্ভকালীন হৃদ্‌রোগ: গর্ভাবস্থায় হৃদ্‌যন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। একটি সুস্থ-সবল হৃদ্‌যন্ত্র এই চাপ সহজেই সহ্য করতে পারে। কিন্তু আগে থেকে জন্মগত হৃদ্‌রোগ বা হৃদ্‌যন্ত্রের ভালভের অসুখ থাকলে, এ সময় জটিল অবস্থায় ধরা পড়তে পারে। ৮ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে গর্ভকালীন ২০ সপ্তাহের পর উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। গর্ভকালীন শেষ তিন মাস এবং প্রসবের পর পাঁচ মাস পর্যন্ত হৃদ্‌যন্ত্র বড় হয়ে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে।

হৃৎস্পন্দনের অসুখ: অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, অস্বাভাবিক দ্রুত অথবা ধীর গতির হৃৎস্পন্দন অন্যতম। অস্বাভাবিক ও অনিয়মিত দ্রুত হৃৎস্পন্দনে বুক ধড়ফড় করে। ধীর গতির হৃৎস্পন্দনের অসুখে মাথা ঘোরানো, মাথা ঝিমঝিম, পড়ে যাওয়া বা অচেতন হওয়ার উপসর্গ থাকতে পারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন